জাতীয় দলের কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন দেশের সবচেয়ে সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার মতে হাইপ্রোফাইল নয়, বাংলাদেশ ক্রিকেটের সংস্কৃতি বুঝবে, খেলোয়াড়দের স্টাডি করবে, খেলোয়াড়দের নিবেদনকে সম্মান করবে এমন কোচকেই নিয়োগ দেয়া উচিত। যিনি হবেন, সত্যিকারের ‘বাংলাদেশের কোচ।’ বাংলাদেশ দলের ড্রেসিরুমে দুই দশক কাটানোয় অনেক কোচের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে মাশরাফির। অধিনায়ক হওয়ায় কোচদের সঙ্গে গাঢ়ভাবে মেশার সুযোগ হয়েছে । ফলে কোচদের সবকিছুই তার নখদর্পনে।

নিজের অভিজ্ঞতা, অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে ভাগাভাগি করলেন। সবশেষে নিজের মতামতও দিয়েছেন। মাশরাফি লিখেন, ‘একটা কোচ যখন নিয়োগ দেওয়া হয় তার প্রসেস আসলে কি থাকে সেটা জানার খুব ইচ্ছা আমার। এ যাবত কালে প্রায় ৯/১০ জন কোচের সাথে কাজ করেছি। আমি যতটুকু দেখেছি প্রত্যেকটা কোচ তার নিজের মতো করে কাজ শুরু করে, যেটা করাটাও স্বাভাবিক। কারণ এক এক জনের কাজের ধরণ এক এক রকম।’

‘কিন্তু সব সময় দেখেছি প্রত্যেকটি কোচ তার নিজস্ব একজন বা দুইজন প্রিয় খেলোয়াড় বানিয়ে নেয়, যা পরে সিলেক্টর, ক্যাপ্টেন বা অন্যকেউ তাকে আর কিছুই বুঝাতে পারেনা বরং সম্পর্ক গুলো জটিল হতে থাকে আর ঐ পছন্দের জন্য সে আবার দুইজনকে এমন অপছন্দ করা শুরু করে যে তাদের আর দেখতেই পারেনা। এক পর্যায়ে এমন জিদ শুরু করে যে প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দিব, এমন কথা প্রকাশ্যেও শুনেছি কয়েকবার কোচের মুখে।’ ‘আমার পয়েন্টটা হলো যে, কোচের পছন্দ নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড় হতেই পারে সেটা সব কোচেরই হয়, অনান্য দেশেও হয় এটাই স্বাভাবিক তবে কখনও সেটা প্রকাশ্যে বুঝতে দেয় না,অনুমান করতে হয়।

কারণ দলের সেরা ৩/৪ জন খেলোয়াড়ই শুধু ম্যাচ জেতায়না।আর জেতালেও আপনি একজনের জন্য আরেকজনকে ছোট করতে পারেন না। দর্শক বা সাংবাদিক অনেক কিছু লিখতেও পারে বলতেও পারে যেটা একদম নরম্যাল ব্যাপার। ‘কোচকে বলা হয় (ফাদার অফ দ্যা সাইড) সে সবাইকে দেখে রাখবে। প্রয়োজনে কঠোর হবে আবার দলের স্বার্থে যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করবে। তার সব কিছুই হতে হবে পজিটিভ কারও প্রতি কঠোর কারও প্রতি নমনীয় এটা এক রকমের বৈষম্যতে রুপ নেয় আমাদের দেশে। যা গোছানো দলকে অগোছালো করে ফেলে।

এক পর্যায়ে তারা আবার নিজেদের দেশে, না হলে আইপিএল বা আরও ভালো কোন অফার পেয়ে চলে যাবে কারণ এতো দিনে সে আমাদের দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে নিজের প্রোফাইলও ভারি করেছে মাঝখান দিয়ে।’ ‘বেতন তো নিয়েছে মাসে ১২/১৫ লাখ টাকা। আর আমাদের কোচ গুলো না খেয়ে মরে। গালি ও দেখি আমাদের কোচরাই হজম করে। আর পরে ওনারা চলে গেলে আমরা পড়ি বিপদে আবার নতুন কোচ নতুন পরীক্ষা নতুন দাবি মেটানো। এভাবেই চলছে বাংলাদেশে কোচদের যাওয়া আসা।’

‘এবার আবার আসি আমার প্রথম লাইনটায়, কোচ নিয়োগের সময় যে নতুন কোচের ইন্টারভিউ নেওয়া হয় সেখানে আসলে তাকে কি প্রশ্ন করা হয়? বা আদেও কি করা হয় কোন প্রশ্ন? নাকি শুধু জানতে চাওয়া হয় তোমার কি করার ইচ্ছা? হয়তো তখন সে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরে ওখান থেকে নতুনত্ব কিছু পেলে চিন্তা করে দারুণ কোচ কি সুন্দর প্লান এর মতো কোচই হয়না।’ ‘আমার তো মনে হয় ভুল ওখানেই হয়ে যায় কারণ আমরা মানুষকে বোঝাতে সব সময় হাইপ্রোফাইল কোচ খুঁজি যা পরে আর কোন কাজে আসেনা।আমাদের প্রয়োজন আমাদের ক্রিকেট যে ফলো করে বা আমাদের ম্যাক্সিম্যাম খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে স্ট্যাডি করে এসে ইন্টারভিউ দিচ্ছে।

 

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে নুন্যতম ধারণা নিয়ে আসা। তা না হলে -ও তো বুঝবেই না একজন সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ তৈরি করতে কতো দিন লেগেছে। বা অতীতে তাদের অবদান কি। একজন মোস্তাফিজ কিভাবে উঠে এসেছে। বার বার বলেছি আবার ও বলছি দলের আগে কখনোই কোন খেলোয়াড় হতে পারেনা, ভালো না করলে বাদ পড়তেই হবে।’ ‘অফ ফর্ম সব খেলোয়াড়ের জীবনেই যায়। বাদ ও পড়ে কিন্তু ম্যানেজমেন্ট থেকে অপমানিত শুধু আমাদের দেশেই বেশি হয়। পারর্ফম না করলে বাদ দিবেন স্বাভাবিক,আবার তাকে তো সহযোগিতা করতে হবে কিভাবে তাকে ফর্মে আনা যায় বা তাকে মেন্টালি কিভাবে সাপোর্ট করা যায় কোন ভাবেই আপনি বুঝতে দিতে পারেন না যে আপনি তাকে আর আপনার সময়কালে দেখতে চাননা।

 

এটার কারণ একটাই কোন কোচই আমাদের দেশে কাজ করার আগে আমাদের দেশের ক্রিকেট ফলোয়ার না।চাকরির জন্য আসে শেষ হলে চলে যায়।’ ‘তাই আমার মনে হয় – হাই প্রোফাইল নয় আমাদের প্রয়োজন, আমাদের কোচ, বাংলাদেশের কোচ।’ ‘একদম নিজস্ব মতামত আপনাকে মানতে হবে তা বলিনি।’